আমরা জেনেছি যে, বৃত্ত একটি সমতলীয় জ্যামিতিক চিত্র যার বিন্দুগুলো কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। বৃত্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন ধারণা যেমন কেন্দ্র, ব্যাস, ব্যাসার্ধ, জ্যা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ে সমতলে কোনো বৃত্তের চাপ ও স্পর্শক সম্পর্কিত প্রতিজ্ঞার আলোচনা করা হবে।
এ অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা ---
বৃত্ত একটি সমতলীয় জ্যামিতিক চিত্র যার বিন্দুগুলো কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্বে অবস্থিত। নির্দিষ্ট বিন্দুটি বৃত্তের কেন্দ্র। নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে কোনো বিন্দু যে আবদ্ধ পথ চিত্রিত করে তাই বৃত্ত। কেন্দ্র হতে বৃত্তস্থ কোনো বিন্দুর দূরত্বকে ব্যাসার্ধ বলে।
মনে করি, O সমতলের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দু এবং নির্দিষ্ট পরিমাপ। সমতলস্থ যে সকল বিন্দু O থেকে r দূরত্বে অবস্থিত, এদের সেট বৃত্ত, যার কেন্দ্র O ও ব্যাসার্ধ r । চিত্রে O বৃত্তের কেন্দ্র, A, B ও C বৃত্তস্থ বিন্দু। OA, OB ও OC এর প্রত্যেকটি বৃত্তটির ব্যাসার্ধ।
সমতলস্থ কতিপয় বিন্দুকে সমবৃত্ত বিন্দু বলা হয় যদি বিন্দুগুলো দিয়ে একটি বৃত্ত যায় অর্থাৎ, এমন একটি বৃত্ত থাকে যাতে বিন্দুগুলো অবস্থিত হয়। উপরের চিত্রে A, B ও C সমবৃত্ত বিন্দু।
বৃত্তের অভ্যন্তর ও বহির্ভাগ (Interior and exterior of a circle)
যদি কোনো বৃত্তের কেন্দ্র O এবং ব্যাসার্ধ । হয় তবে O থেকে সমতলের যে সকল বিন্দুর দূরত্ব r এর চেয়ে কম এদের সেটকে বৃত্তটির অভ্যন্তর এবং O থেকে সমতলের যে সকল বিন্দুর দূরত্ব r এর চেয়ে বেশি এদের সেটকে বৃত্তটির বহির্ভাগ বলা হয। বৃত্তের অভ্যন্তরস্থ দুইটি বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ সম্পূর্ণভাবে বৃত্তের অভ্যন্তরেই থাকে।
কোনো বৃত্তের অভ্যন্তরস্থ একটি বিন্দু ও বহিঃস্থ একটি বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ বৃত্তটিকে একটি ও কেবল একটি বিন্দুতে ছেদ করে। চিত্রে, P বৃত্তের অভ্যন্তরস্থ একটি বিন্দু এবং Q বৃত্তের বহিঃস্থ একটি বিন্দু। PQ রেখাংশ বৃত্তটিকে কেবল R বিন্দুতে ছেদ করে।
বৃত্তের জ্যা ও ব্যাস (Chord and diameter of a circle)
বৃত্তের দুইটি ভিন্ন বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ বৃত্তটির একটি জ্যা। বৃত্তের কোনো জ্যা যদি কেন্দ্র দিয়ে যায় তবে জ্যাটিকে বৃত্তের ব্যাস বলা হয়। অর্থাৎ বৃত্তের কেন্দ্রগামী যেকোনো জ্যা হলো ব্যাস। চিত্রে, AB ও AC বৃত্তটির দুইটি জ্যা এবং বৃত্তটির কেন্দ্র O। এদের মধ্যে AC জ্যাটি ব্যাস; কারণ জ্যাটি বৃত্তটির কেন্দ্রগামী। OA ও OC বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ সুতরাং, বৃত্তের কেন্দ্র প্রত্যেক ব্যাসের মধ্যবিন্দু। অতএব প্রত্যেক ব্যাসের দৈর্ঘ্য 2r, যেখানে r বৃত্তটির ব্যাসার্ধ।
উপপাদ্য ১৭.বৃত্তের কেন্দ্র ও ব্যাস ভিন্ন কোনো জ্যা এর মধ্যবিন্দুর সংযোজক রেখাংশ ঐ জ্যা এর ওপর লম্ব।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট ABC বৃত্তে ব্যাস নয় এমন একটি জ্যা AB এবং এই জ্যা এর মধ্য বিন্দু M । O, M যোগ করি। প্রমাণ করতে হবে যে, OM রেখাংশ AB জ্যা এর উপর লম্ব। অঙ্কন: O, A এবং O, B যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. ∆OAM এবং ∆OBM এ
AM = BM [ M, AB এর মধ্যবিন্দু]
OA = OB [ উভয়ে একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ ]
এবং OM = OM [সাধারণ বাহু]
সুতরাং, ∆OAM ≅ ∆OBM [বাহু-বাহু-বাহু উপপাদ্য]
∠OMA = ∠OMB
ধাপ ২. যেহেতু কোণদ্বয় রৈখিক যুগল কোণ এবং এদের পরিমাপ সমান।
সুতরাং, ∠OMA = ∠OMB = এক সমকোণ।
অতএব, OM ⊥ AB । (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ১. বৃত্তের যেকোনো জ্যা এর লম্বদ্বিখণ্ডক কেন্দ্রগামী।
অনুসিদ্ধান্ত ২. যেকোনো সরলরেখা একটি বৃত্তকে দুইয়ের অধিক বিন্দুতে ছেদ করতে পারে না।
কাজ : উপপাদ্য ১৭ এর বিপরীত উপপাদ্যটি নিম্নরূপ : বৃত্তের কেন্দ্র থেকে ব্যাস ভিন্ন অন্য কোনো জ্যা এর ওপর অঙ্কিত লম্ব ঐ জ্যাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে। উপপাদ্যটি প্রমাণ কর। |
উপপাদ্য ১৮. বৃত্তের সকল সমান জ্যা কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী।
মনে করি, O বৃত্তের কেন্দ্র এবং AB ও CD বৃত্তের দুইটি সমান জ্যা। প্রমাণ করতে হবে যে, O থেকে AB এবং CD জ্যাদ্বয় সমদূরবর্তী।
অঙ্কন : O থেকে AB এবং CD জ্যা এর উপর যথাক্রমে OE এবং OF লম্ব রেখাংশ আঁকি। O, A এবং O, C যোগ করি। প্ৰমাণ :
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. OE ⊥ AB এবং OF ⊥ CD
সুতরাং, AE = BE এবং CF = DF [ কেন্দ্র থেকে ব্যাস ভিন্ন যেকোনো জ্যা এর উপর অঙ্কিত লম্ব জ্যাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে]
এবং
ধাপ ২. কিন্তু AB = CD [ধরে নেয়া]
AE = CF
ধাপ ৩. এখন ∆OAE এবং ∆OCF সমকোণী ত্রিভুজদ্বয়ের মধ্যে
অতিভুজ OA = অতিভুজ OC [উভয়ে একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ]
এবং AE = CF [ধাপ ২]
∆OAE = ∆OCF [সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ-বাহু সর্বসমতা উপপাদ্য]
OE = OF
ধাপ ৪. কিন্তু OE এবং OF কেন্দ্র O থেকে যথাক্রমে AB জ্যা এবং CD জ্যা এর দূরত্ব।
সুতরাং, AB এবং CD জ্যাদ্বয় বৃত্তের কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী। (প্রমাণিত)
উপপাদ্য ১৯. বৃত্তের কেন্দ্র থেকে সমদূরবর্তী সকল জ্যা পরস্পর সমান।
মনে করি, O বৃত্তের কেন্দ্র এবং AB ও CD দুইটি জ্যা। O থেকে AB ও CD এর উপর যথাক্রমে OE ও OF লম্ব। তাহলে OE ও OF কেন্দ্র থেকে যথাক্রমে AB ও CD জ্যা এর দূরত্ব নির্দেশ করে। OE = OF হলে প্রমাণ করতে হবে যে, AB = CD
অঙ্কন : O, A ও O,C যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. যেহেতু OE ⊥ AB ও OF ⊥ CD
সুতরাং, ∠OEA = ∠OFC = এক সমকোণ।
ধাপ ২. এখন, ∆OAE এবং ∆OCE সমকোণী ত্রিভুজদ্বয়ের মধ্যে
অতিভুজ OA = অতিভুজ OC [উভয়ে একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ]
এবং OE = OF [ধরে নেয়া]
∆OAE ≅ ∆OCF [সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ-বাহু সর্বসমতা উপপাদ্য]
AE = CF
ধাপ ৩. এবং [ কেন্দ্র থেকে ব্যাস ভিন্ন যেকোনো জ্যা এর উপর অঙ্কিত লম্ব জ্যাকে সমদ্বিখণ্ডিত করে]
ধাপ ৪. সুতরাং
অর্থাৎ, AB = CD । (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ৩. বৃত্তের ব্যাসই বৃহত্তম জ্যা।
বৃত্তের যেকোনো দুইটি বিন্দুর মধ্যের পরিধির অংশকে চাপ বলে। চিত্রে A ও B দুইটি বিন্দুর মাঝে বৃত্তের অংশগুলো লক্ষ করি। দেখা যায়, দুইটি অংশের একটি অংশ ছোট, অন্যটি তুলনামূলকভাবে বড় । ছোট অংশটিকে উপচাপ ও বড়টিকে অধিচাপ বলা হয়। A ও B এই চাপের প্রান্তবিন্দু এবং চাপের অন্য সকল বিন্দু তার অন্তঃস্থ বিন্দু। চাপের অন্তঃস্থ একটি বিন্দু R নির্দিষ্ট করে চাপটিকে ARB চাপ বলে অভিহিত করা হয় এবং ARB প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আবার কখনো উপচাপটি AB প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। বৃত্তের দুইটি বিন্দু A ও B বৃত্তটিকে দুইটি চাপে বিভক্ত করে। উভয় চাপের প্রান্তবিন্দু A ও B এবং প্রান্তবিন্দু ছাড়া চাপ দুইটির অন্য কোনো সাধারণ বিন্দু নেই।
কোণ কর্তৃক খণ্ডিত চাপ
একটি কোণ কোনো বৃত্তে একটি চাপ খণ্ডিত বা ছিন্ন করে বলা হয় যদি
১. চাপটির প্রত্যেক প্রান্তবিন্দু কোণটির বাহুতে অবস্থিত হয়,
২. কোণটির প্রত্যেক বাহুতে চাপটির অন্তত একটি প্রান্তবিন্দু অবস্থিত হয় এবং
৩. চাপটির অন্তঃস্থ প্রত্যেকটি বিন্দু কোণটির অভ্যন্তরে থাকে। চিত্রে প্রদর্শিত কোণটি O কেন্দ্রিক বৃত্তে APB চাপ খণ্ডিত করে।
বৃত্তস্থ কোণ (Inscribed angle)
বৃত্তের দুইটি জ্যা পরস্পরকে বৃত্তের উপর কোনো বিন্দুতে ছেদ করলে এদের মধ্যবর্তী কোণকে বৃত্তস্থ কোণ বা বৃত্তে অন্তর্লিখিত কোণ বলা হয়। চিত্রে ∠ACB বৃত্তস্থ কোণ। প্রত্যেক বৃত্তস্থ কোণ বৃত্তে একটি চাপ খণ্ডিত করে। এই চাপ উপচাপ, অর্ধবৃত্ত অথবা অধিচাপ হতে পারে।
একটি বৃত্তস্থ কোণ বৃত্তে যে চাপ খণ্ডিত করে, কোণটি সেই চাপের ওপর দণ্ডায়মান এবং খণ্ডিত চাপের অনুবন্ধী চাপে অন্তর্লিখিত বলা হয়।
পাশের চিত্রে বৃত্তস্থ কোণটি APB চাপের ওপর দণ্ডায়মান এবং ACB চাপে অন্তর্লিখিত।
লক্ষণীয় যে, APB ও ACB একে অপরের অনুবন্ধী চাপ।
মন্তব্য : বৃত্তের কোনো চাপে অন্তর্লিখিত একটি কোণ হচ্ছে সেই কোণ যার শীর্ষবিন্দু ঐ চাপের একটি অন্তঃস্থ বিন্দু এবং যার এক একটি বাহু ঐ চাপের এক একটি প্রান্তবিন্দু দিয়ে যায়। বৃত্তের কোনো চাপে দণ্ডায়মান একটি বৃত্তস্থ কোণ হচ্ছে ঐ চাপের অনুবন্ধী চাপে অন্তর্লিখিত একটি কোণ।
কেন্দ্রস্থ কোণ (Central angle)
একটি কোণের শীর্ষবিন্দু কোনো বৃত্তের কেন্দ্রে অবস্থিত হলে, কোণটিকে ঐ বৃত্তের একটি কেন্দ্রস্থ কোণ বলা হয় এবং কোণটি বৃত্তে যে চাপ খণ্ডিত করে সেই চাপের ওপর তা দণ্ডায়মান বলা হয়। পাশের চিত্রের ∠AOB কোণটি একটি কেন্দ্রস্থ কোণ এবং তা APB চাপের ওপর দণ্ডায়মান। প্রত্যেক কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তে একটি উপচাপ খণ্ডিত করে। চিত্রে APB একটি উপচাপ। বৃত্তের কোনো উপচাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বলতে এরূপ কোণকেই বোঝায় যার শীর্ষবিন্দু বৃত্তের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং যার বাহুদ্বয় ঐ চাপের প্রান্তবিন্দু দুইটি দিয়ে যায়।
অর্ধবৃত্তের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বিবেচনার জন্য ওপরে উল্লেখিত বর্ণনা অর্থবহ নয়। অর্ধবৃত্তের ক্ষেত্রে কেন্দ্রস্থ কোণ ∠BOC সরলকোণ এবং বৃত্তস্থ কোণ ∠BAC সমকোণ।
উপপাদ্য ২০. বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট ABC একটি বৃত্ত এবং তার একই উপচাপ BC এর ওপর দণ্ডায়মান ∠BAC বৃত্তস্থ এবং ∠BOC কেন্দ্ৰস্থ কোণ।
প্রমাণ করতে হবে যে, ∠BOC = 2∠BAC
অঙ্কন : মনে করি, AC রেখাংশ কেন্দ্রগামী নয়। এ ক্ষেত্রে A বিন্দু দিয়ে কেন্দ্রগামী রেখাংশ AD আঁকি।
প্ৰমাণ :
অন্যভাবে বলা যায়, বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণ কেন্দ্রস্থ কোণের অর্ধেক।
কাজ : O কেন্দ্র বিশিষ্ট ABC বৃত্তের AC রেখা কেন্দ্রগামী হলে উপপাদ্য ২০ প্রমাণ কর। |
উপপাদ্য ২১. বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণগুলো পরস্পর সমান।
মনে করি, O বৃত্তের কেন্দ্র এবং বৃত্তের BCD চাপের ওপর দণ্ডায়মান ∠BAD এবং ∠BED দুইটি বৃত্তস্থ কোণ। প্রমাণ করতে হবে যে, ∠BAD = ∠BED ।
অঙ্কন : O, B এবং O, D যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. এখানে BCD চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ ∠BOD ।
সুতরাং, ∠BOD = 2∠BAD এবং ∠BOD = 2∠BED [ একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ]
2∠BAD = 2∠BED
বা ∠BAD = ∠BED । (প্রমাণিত)
উপপাদ্য ২২. অর্ধবৃত্তস্থ কোণ এক সমকোণ।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তে AB একটি ব্যাস এবং ∠ACB একটি অর্ধবৃত্তস্থ কোণ। প্রমাণ করতে হবে যে, ∠ACB এক সমকোণ।
অঙ্কন : AB এর যে পাশে C বিন্দু অবস্থিত, তার বিপরীত পাশে বৃত্তের উপর একটি বিন্দু D নিই।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. ADB চাপের ওপর দণ্ডায়মান
বৃত্তস্থ (কেন্দ্রস্থ সরল কোণ ∠AOB) [ একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণ কেন্দ্রস্থ কোণের অর্ধেক]
ধাপ ২. কিন্তু সরলকোণ ∠AOB = দুই সমকোণ।
(দুই সমকোণ) = এক সমকোণ। (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ৪. সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজকে ব্যাস ধরে বৃত্ত অঙ্কন করলে তা সমকৌণিক শীর্ষবিন্দু দিয়ে যাবে।
অনুসিদ্ধান্ত ৫. কোনো বৃত্তের অধিচাপে অন্তর্লিখিত কোণ সূক্ষ্মকোণ।
কাজ : প্রমাণ কর যে, কোনো বৃত্তের উপচাপে অন্তর্লিখিত কোণ স্থূলকোণ। |
বৃত্তীয় চতুর্ভুজ বা বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজ হলো এমন চতুর্ভুজ যার চারটি শীর্ষবিন্দু বৃত্তের উপর অবস্থিত। এ সকল চতুর্ভুজের বিশেষ কিছু ধর্ম রয়েছে। বিষয়টি অনুধাবনের জন্য নিচের কাজটি করি।
কাজ : বিভিন্ন আকারের কয়েকটি বৃত্তীয় চতুর্ভুজ আঁক। কয়েকটি বিভিন্ন ব্যাসার্ধের বৃত্ত অঙ্কন করে প্রতিটির উপর চারটি করে বিন্দু নিয়ে চতুর্ভুজগুলো সহজেই আঁকা যায়। চতুর্ভুজের কোণগুলো মেপে নিচের সারণিটি পূরণ কর।
সারণি থেকে কী বোঝা যায়? |
উপপাদ্য ২৩. বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজের যেকোনো দুইটি বিপরীত কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট একটি বৃত্তে ∠BCD চতুর্ভুজটি অন্তর্লিখিত হয়েছে। প্রমাণ করতে হবে যে, ∠ABC + ∠ADC = দুই সমকোণ এবং ∠BAD + ∠BCD = দুই সমকোণ।
অঙ্কন : O, A এবং O, C যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. একই চাপ ADC এর উপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ প্রবৃদ্ধ ∠AOC = 2 (বৃত্তস্থ ∠ABC)
অর্থাৎ, প্রবৃদ্ধ ∠AOC = 2∠ABC [বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ]
ধাপ ২. আবার, একই চাপ ABC এর উপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ ∠AOC = 2 (বৃত্তস্থ ∠ADC)
অর্থাৎ কোণ ∠AOC = 2∠ADC [বৃত্তের একই চাপের ওপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ]
প্রবৃদ্ধ ∠AOC+কোণ ∠AOC = 2 ( ∠ABC + ∠ADC)
কিন্তু প্রবৃদ্ধ ∠AOC+ কোণ ∠AOC = চার সমকোণ
2(∠ABC + ∠ADC) = চার সমকোণ
∠ABC + ∠ADC= দুই সমকোণ।
একইভাবে, প্রমাণ করা যায় যে, ∠BAD + ∠BCD = দুই সমকোণ। (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ৬. বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজের একটি বাহু বর্ধিত করলে যে বহিঃস্থ কোণ উৎপন্ন হয় তা বিপরীত অন্তঃস্থ কোণের সমান।
অনুসিদ্ধান্ত ৭. বৃত্তে অন্তর্লিখিত সামান্তরিক একটি আয়তক্ষেত্র।
উপপাদ্য ২৪. কোনো চতুর্ভুজের দুইটি বিপরীত কোণ সম্পূরক হলে তার শীর্ষবিন্দু চারটি সমবৃত্ত হয়।
মনে করি, ABCD চতুর্ভুজে ∠ABC + ∠ADC দুই = সমকোণ। প্রমাণ করতে হবে যে, A, B, C, D বিন্দু চারটি সমবৃত্ত। অঙ্কন : যেহেতু A, B, C বিন্দু তিনটি সমরেখ নয়, সুতরাং বিন্দু তিনটি দিয়ে যায় এরূপ একটি ও কেবল একটি বৃত্ত আছে। মনে করি, বৃত্তটি AD রেখাংশকে E বিন্দুতে ছেদ করে। C, E যোগ করি।
প্রমাণ : অঙ্কন অনুসারে ABCE বৃত্তস্থ চতুর্ভুজ।
সুতরাং ∠ABC + ∠AEC দুই সমকোণ [বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজের যেকোনো দুইটি বিপরীত কোণের সমষ্টি দুই সমকোণ]
কিন্তু ∠ABC + ∠ADC = দুই সমকোণ [দেওয়া আছে]
∠AEC = ∠ADC
কিন্তু তা অসম্ভব। কারণ চিত্রে ∆CED এর বহিঃস্থ ∠AEC > বিপরীত অন্তঃস্থ ∠ADC
সুতরাং E এবং D বিন্দুদ্বয় ভিন্ন হতে পারে না। E বিন্দু অবশ্যই D বিন্দুর সাথে মিলে যাবে।
অতএব, A, B, C, D বিন্দু চারটি সমবৃত্ত। (প্রমাণিত)
সমতলে একটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখার পারস্পরিক অবস্থান বিবেচনা করি। এক্ষেত্রে নিচের চিত্রের প্রদত্ত তিনটি সম্ভাবনা রয়েছে :
ক) বৃত্ত ও সরলরেখার কোনো সাধারণ বিন্দু নেই,
খ) সরলরেখাটি বৃত্তকে দুইটি বিন্দুতে ছেদ করেছে,
গ) সরলরেখাটি বৃত্তকে একটি বিন্দুতে স্পর্শ করেছে।
সমতলে একটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখার সর্বাধিক দুইটি ছেদবিন্দু থাকতে পারে। সমতলস্থ একটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখার যদি দুইটি ছেদবিন্দু থাকে তবে রেখাটিকে বৃত্তটির একটি ছেদক বলা হয় এবং যদি একটি ও কেবল একটি সাধারণ বিন্দু থাকে তবে রেখাটিকে বৃত্তটির একটি স্পর্শক বলা হয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে, সাধারণ বিন্দুটিকে ঐ স্পর্শকের স্পর্শবিন্দু বলা হয়। উপরের চিত্রে একটি বৃত্ত ও একটি সরলরেখার পারস্পরিক অবস্থান দেখানো হয়েছে।
চিত্র-ক এ বৃত্ত ও PQ সরলরেখার কোনো সাধারণ বিন্দু নেই, চিত্র-খ এ PQ সরলরেখাটি বৃত্তকে A ও B দুইটি বিন্দুতে ছেদ করেছে এবং চিত্র-গ এ PQ সরলরেখাটি বৃত্তকে A বিন্দুতে স্পর্শ করেছে। PQ বৃত্তটির স্পর্শক ও A এই স্পর্শকের স্পর্শবিন্দু।
মন্তব্য : বৃত্তের প্রত্যেক ছেদকের ছেদবিন্দুদ্বয়ের অন্তবর্তী সকল বিন্দু বৃত্তটির অভ্যন্তরে থাকে।
সাধারণ স্পর্শক (Common tangent)
একটি সরলরেখা যদি দুইটি বৃত্তের স্পর্শক হয়, তবে একে বৃত্ত দুইটির একটি সাধারণ স্পর্শক বলা হয়। পাশের চিত্রগুলোতে AB উভয় বৃত্তের সাধারণ স্পর্শক। চিত্র-ক ও চিত্র-খ এ স্পর্শবিন্দু ভিন্ন ভিন্ন। চিত্র-গ ও চিত্র-ঘ এ স্পর্শবিন্দু একই।
দুইটি বৃত্তের কোনো সাধারণ স্পর্শকের স্পর্শবিন্দু দুইটি ভিন্ন হলে স্পর্শকটিকে
ক) সরল সাধারণ স্পর্শক বলা হয় যদি বৃত্ত দুইটির কেন্দ্রদ্বয় স্পর্শকের একই পার্শ্বে থাকে এবং
খ) তির্যক সাধারণ স্পর্শক বলা হয় যদি বৃত্ত দুইটির কেন্দ্রদ্বয় স্পর্শকের বিপরীত পার্শ্বে থাকে।
চিত্র-ক এ স্পর্শকটি সরল সাধারণ স্পর্শক এবং চিত্র-খ এ স্পর্শকটি তির্যক সাধারণ স্পর্শক।
দুইটি বৃত্তের সাধারণ স্পর্শক যদি বৃত্ত দুইটিকে একই বিন্দুতে স্পর্শ করে তবে ঐ বিন্দুতে বৃত্ত দুইটি পরস্পরকে স্পর্শ করে বলা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে, বৃত্ত দুইটির অন্তঃস্পর্শ হয়েছে বলা হয় যদি কেন্দ্রদ্বয় স্পর্শকের একই পার্শ্বে থাকে এবং বহিঃস্পর্শ হয়েছে বলা হয় যদি কেন্দ্রদ্বয় স্পর্শকের বিপরীত পার্শ্বে থাকে। চিত্র-গ এ বৃত্ত দুইটির অন্তঃস্পর্শ এবং চিত্র-ঘ এ বহিঃস্পর্শ হয়েছে।
উপপাদ্য ২৫. বৃত্তের যেকোনো বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধের ওপর লম্ব।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট একটি বৃত্তের ওপরস্থ P বিন্দুতে PT একটি স্পর্শক এবং OP স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধ। প্রমাণ করতে হবে যে, PT ⊥ OP.
অঙ্কন : PT স্পর্শকের ওপর যেকোনো একটি বিন্দু Q নিই এবং O,Q যোগ করি।
প্রমাণ: যেহেতু বৃত্তের P বিন্দুতে PT একটি স্পর্শক, সুতরাং ঐ P বিন্দু ব্যতীত PT এর ওপরস্থ অন্য সকল বিন্দু বৃত্তের বাইরে থাকবে। সুতরাং Q বিন্দুটি বৃত্তের বাইরে অবস্থিত।
OQ বৃত্তের ব্যাসার্ধ OP এর চেয়ে বড়, অর্থাৎ, OQ > OP এবং তা স্পর্শবিন্দু P ব্যতীত PT এর ওপরস্থ Q বিন্দুর সকল অবস্থানের জন্য সত্য।
কেন্দ্র O থেকে PT স্পর্শকের ওপর OP হল ক্ষুদ্রতম দূরত্ব।
সুতরাং PT ⊥ OP [কোনো সরলরেখার বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে উক্ত সরলরেখার উপর যতগুলো রেখাংশ টানা যায় তন্মধ্যে লম্ব রেখাংশটিই ক্ষুদ্রতম]
(প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ৮. বৃত্তের কোনো বিন্দুতে একটিমাত্র স্পর্শক অঙ্কন করা যায়।
অনুসিদ্ধান্ত ৯. স্পর্শবিন্দুতে স্পর্শকের ওপর অঙ্কিত লম্ব কেন্দ্রগামী।
অনুসিদ্ধান্ত ১০. বৃত্তের কোনো বিন্দু দিয়ে ঐ বিন্দুগামী ব্যাসার্ধের ওপর অঙ্কিত লম্ব উক্ত বিন্দুতে বৃত্তটির স্পর্শক হয়।
উপপাদ্য ২৬. বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে বৃত্তে দুইটি স্পর্শক টানলে, ঐ বিন্দু থেকে স্পর্শ বিন্দুদ্বয়ের দূরত্ব সমান।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট ABC বৃত্তের P একটি বহিঃস্থ বিন্দু এবং PA ও PB রেখাংশদ্বয় বৃত্তের A ও B বিন্দুতে দুইটি স্পর্শক । প্রমাণ করতে হবে যে, PA = PB
অঙ্কন : O, A; O, B এবং O, P যোগ করি।
প্ৰমাণ :
ধাপ ১. যেহেতু PA স্পর্শক এবং OA স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধ, সেহেতু PA ⊥ OA
∠PAO = এক সমকোণ। [ স্পর্শক স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধের ওপর লম্ব]
অনুরূপে ∠PBO = এক সমকোণ।
∆PAO এবং ∆PBO উভয়ই সমকোণী ত্রিভুজ।
ধাপ ২. এখন, ∆PAO এবং ∆PBO সমকোণী ত্রিভুজদ্বয়ে অতিভুজ PO = অতিভুজ PO এবং OA = OB [ একই বৃত্তের ব্যাসার্ধ]
∆PAO ≅ ∆PBO [সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ-বাহু সর্বসমতা]
PA = PB । (প্রমাণিত)
মন্তব্য :
১. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে বহিঃস্পর্শ করলে, স্পর্শবিন্দু ছাড়া প্রত্যেক বৃত্তের অন্য সকল বিন্দু অপর বৃত্তের বাইরে থাকবে।
২. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে অন্তঃস্পর্শ করলে, স্পর্শবিন্দু ছাড়া ছোট বৃত্তের অন্য সকল বিন্দু বড় বৃত্তটির অভ্যন্তরে থাকবে।
উপপাদ্য ২৭. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে বহিঃস্পর্শ করলে, এদের কেন্দ্রদ্বয় ও স্পর্শ বিন্দু সমরেখ।
মনে করি, A ও B কেন্দ্রবিশিষ্ট দুইটি বৃত্ত পরস্পর O বিন্দুতে বহিঃস্পর্শ করে। প্রমাণ করতে হবে যে, A,O,B বিন্দু তিনটি সমরেখ।
অঙ্কন : যেহেতু বৃত্তদ্বয় পরস্পর O বিন্দুতে স্পর্শ করেছে, সুতরাং O বিন্দুতে এদের একটি সাধারণ স্পর্শক থাকবে। এখন O বিন্দুতে সাধারণ স্পর্শক POQ অঙ্কন করি এবং O, A ও O, B যোগ করি।
প্ৰমাণ :
A কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তে OA স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধ এবং POQ স্পর্শক।
সুতরাং ∠POA = এক সমকোণ। তদ্রূপ ∠POB = এক সমকোণ
∠POA + ∠POB = এক সমকোণ + এক সমকোণ = দুই সমকোণ।
বা ∠AOB দুই সমকোণ
অর্থাৎ, ∠AOB একটি সরলকোণ।
A, O, B বিন্দুত্রয় সমরেখ। (প্রমাণিত)
অনুসিদ্ধান্ত ১১. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে বহিঃস্পর্শ করলে, কেন্দ্রদ্বয়ের দূরত্ব বৃত্তদ্বয়ের ব্যাসার্ধের সমষ্টির সমান।
অনুসিদ্ধান্ত ১২. দুইটি বৃত্ত পরস্পরকে অন্তঃস্পর্শ করলে, কেন্দ্রদ্বয়ের দূরত্ব বৃত্তদ্বয়ের ব্যাসার্ধের অন্তরের সমান।
কাজ : প্রমাণ কর যে, দুইটি বৃত্ত পরস্পর অন্তঃস্পর্শ করলে, এদের কেন্দ্রদ্বয় ও স্পর্শবিন্দু সমরেখ হবে। |
সম্পাদ্য ৬. একটি বৃত্ত বা বৃত্তচাপ দেওয়া আছে, কেন্দ্র নির্ণয় করতে হবে।
একটি বৃত্ত (চিত্র-১) বা বৃত্তচাপ (চিত্র-২) দেওয়া আছে, বৃত্তটির বা বৃত্তচাপটির কেন্দ্র নির্ণয় করতে হবে।
অঙ্কন : প্রদত্ত বৃত্তে বা বৃত্তচাপে তিনটি বিন্দু A, B ও C নিই। A, B ও B, C যোগ করি। AB ও BC জ্যা দুইটির লম্বদ্বিখণ্ডক। যথাক্রমে EF, GH রেখাংশ দুইটি টানি। মনে করি, তারা পরস্পর O বিন্দুতে ছেদ করে। সুতরাং, O বিন্দুই বৃত্তের বা বৃত্তচাপের কেন্দ্র। প্রমাণ: EF রেখাংশ AB জ্যা এর এবং GH রেখাংশ BC জ্যা এর লম্বদ্বিখণ্ডক। কিন্তু EF ও GH উভয়ে কেন্দ্রগামী এবং O এদের সাধারণ ছেদ বিন্দু। সুতরাং O বিন্দুই বৃত্তের বা বৃত্তচাপের কেন্দ্ৰ।
বৃত্তের স্পর্শক অঙ্কন
আমরা জেনেছি যে, বৃত্তের ভিতরে অবস্থিত কোনো বিন্দু থেকে বৃত্তের স্পর্শক আঁকা যায় না। বিন্দুটি যদি বৃত্তের ওপর থাকে তাহলে উক্ত বিন্দুতে বৃত্তের একটিমাত্র স্পর্শক অঙ্কন করা যায়। স্পর্শকটি বর্ণিত বিন্দুতে অঙ্কিত ব্যাসার্ধের উপর লম্ব হয়। সুতরাং, বৃত্তস্থিত কোনো বিন্দুতে বৃত্তের স্পর্শক অঙ্কন করতে হলে বর্ণিত বিন্দুতে ব্যাসার্ধ অঙ্কন করে ব্যাসার্ধের উপর লম্ব আঁকতে হবে। আবার বিন্দুটি বৃত্তের বাইরে অবস্থিত হলে তা থেকে বৃত্তে দুইটি স্পর্শক আঁকা যাবে।
সম্পাদ্য ৭. বৃত্তের কোনো বিন্দুতে একটি স্পর্শক আঁকতে হবে।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তে A একটি বিন্দু। A বিন্দুতে বৃত্তটিতে একটি স্পর্শক আঁকতে হবে।
অঙ্কন : O, A যোগ করি। A বিন্দুতে OA এর উপর AP লম্ব আঁকি। তাহলে AP নির্ণেয় স্পর্শক।
প্রমাণ : OA রেখাংশ A বিন্দুগামী ব্যাসার্ধ এবং AP তার ওপর লম্ব। সুতরাং, AP রেখাই নির্ণেয় স্পর্শক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বৃত্তের কোনো বিন্দুতে একটিমাত্র স্পর্শক আঁকা যায়।
সম্পাদ্য ৮. বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে বৃত্তটির স্পর্শক আঁকতে হবে।
মনে করি, O কেন্দ্রবিশিষ্ট বৃত্তের P একটি বহিঃস্থ বিন্দু। P বিন্দু থেকে ঐ বৃত্তে স্পর্শক আঁকতে হবে।
অঙ্কন :
১. P,O যোগ করি। PO রেখাংশের মধ্যবিন্দু M নির্ণয় করি।
২. এখন M কে কেন্দ্র করে MO এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে P একটি বৃত্ত আঁকি। মনে করি, নতুন অঙ্কিত বৃত্তটি প্রদত্ত বৃত্তকে A ও B বিন্দুতে ছেদ করে।
৩. A, P এবং B, P যোগ করি।
তাহলে, AP, BP উভয়েই নির্ণেয় স্পর্শক।
প্রমাণ : A, O ও B, O যোগ করি। APB বৃত্তে PO ব্যাস।
∠PAO = এক সমকোণ [ অর্ধবৃত্তস্থ কোণ সমকোণ]
সুতরাং, OA রেখাংশ AP রেখাংশের ওপর লম্ব। অতএব, O কেন্দ্রিক বৃত্তের A বিন্দুতে AP রেখাংশ একটি স্পর্শক। অনুরূপভাবে, BP রেখাংশও একটি স্পর্শক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু থেকে ঐ বৃত্তে দুইটি ও কেবল দুইটি স্পর্শক আঁকা যায়।
সম্পাদ্য ৯. কোনো নির্দিষ্ট ত্রিভুজের পরিবৃত্ত আঁকতে হবে।
মনে করি, ABC একটি ত্রিভুজ। এর পরিবৃত্ত আঁকতে হবে। অর্থাৎ, এমন একটি বৃত্ত আঁকতে হবে, যা ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষবিন্দু A, B ও C বিন্দু দিয়ে যায়।
অঙ্কন :
১. AB ও AC রেখাংশের লম্ব সমদ্বিখণ্ডক যথাক্রমে EM ও FN রেখাংশ আঁকি। মনে করি, তারা পরস্পরকে O বিন্দুতে ছেদ করে।
২. A, O যোগ করি। O কে কেন্দ্র করে OA এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকি।
তাহলে, বৃত্তটি A, B ও C বিন্দুগামী হবে এবং এই বৃত্তটিই ∆ABC এর নির্ণেয় পরিবৃত্ত।
প্রমাণ : B,O ও C,O যোগ করি। O বিন্দুটি AB এর লম্বদ্বিখণ্ডক EM এর ওপর অবস্থিত।
OA = OB, একইভাবে, OA = OC
OA = OB = OC
সুতরাং O কে কেন্দ্র করে OA এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে অঙ্কিত বৃত্তটি A, B ও C বিন্দু তিনটি দিয়ে যাবে। সুতরাং এই বৃত্তটিই ∆ABC এর পরিবৃত্ত।
কাজ : ওপরের চিত্রে একটি সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের পরিবৃত্ত আঁকা হয়েছে। স্থূলকোণী এবং সমকোণী ত্রিভুজের পরিবৃত্ত অঙ্কন কর। |
লক্ষণীয় যে, সূক্ষ্মকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে পরিকেন্দ্র ত্রিভুজের অভ্যন্তরে, স্থূলকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে পরিকেন্দ্র ত্রিভুজের বহির্ভাগে এবং সমকোণী ত্রিভুজের ক্ষেত্রে পরিকেন্দ্র অতিভুজের ওপর অবস্থিত।
সম্পাদ্য ১০. কোনো নির্দিষ্ট ত্রিভুজের অন্তবৃত্ত আঁকতে হবে।
মনে করি, ∆ABC একটি ত্রিভুজ। এর অন্তবৃত্ত আঁকতে হবে। অর্থাৎ, ∆ABC এর ভিতরে এমন একটি বৃত্ত আঁকতে হবে, যা BC, CA ও AB বাহু তিনটির প্রত্যেকটিকে স্পর্শ করে।
অঙ্কন : ∠ABC ও ∠ACB এর সমদ্বিখণ্ডক যথাক্রমে BL ও CM আঁকি । মনে করি, তারা O বিন্দুতে ছেদ করে। O থেকে BC এর ওপর OD লম্ব আঁকি এবং মনে করি, তা BC কে D বিন্দুতে ছেদ করে। O কে কেন্দ্র করে OD এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকি। তাহলে, এই বৃত্তটিই নির্ণেয় অন্তবৃত্ত।
প্রমাণ : O থেকে AC ও AB এর ওপর যথাক্রমে OE ও OF লম্ব টানি। মনে করি, লম্বদ্বয় বাহুদ্বয়কে যথাক্রমে E ও F বিন্দুতে ছেদ করে।
O বিন্দু ∠ABC এর দ্বিখণ্ডকের ওপর অবস্থিত।
OF = OD
অনুরূপভাবে, O বিন্দু ∠ACB এর দ্বিখণ্ডকের ওপর অবস্থিত বলে OE = OD
OD = OF = OF
সুতরাং O কে কেন্দ্র করে OD এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে বৃত্ত আঁকলে তা D, E ও F বিন্দু দিয়ে যাবে।
আবার, OD, OE ও OF এর প্রান্তবিন্দুতে যথাক্রমে BC, AC ও AB লম্ব।
সুতরাং বৃত্তটি ∆ABC এর ভিতরে থেকে এর বাহু তিনটিকে যথাক্রমে D, E ও F বিন্দুতে স্পর্শ করে।
অতএব, DEF বৃত্তটিই ∆ABC এর অন্তবৃত্ত হবে।
সম্পাদ্য ১১. কোনো নির্দিষ্ট ত্রিভুজের বহির্বৃত্ত আঁকতে হবে।
মনে করি, ABC একটি ত্রিভুজ। এর বহির্বৃত্ত আঁকতে হবে। অর্থাৎ, এমন একটি বৃত্ত আঁকতে হবে, যা ত্রিভুজের একটি বাহুকে এবং অপর দুই বাহুর বর্ধিতাংশকে স্পর্শ করে।
অঙ্কন: AB ও AC বাহুদ্বয়কে যথাক্রম D ও F পর্যন্ত বর্ধিত করি। ∠DBC ও ∠FCB এর সমদ্বিখণ্ডক BM ও CN আঁকি। মনে করি, E এদের ছেদবিন্দু। E থেকে BC এর ওপর EH লম্ব আঁকি এবং মনে করি তা BC কে H বিন্দুতে ছেদ করে। E কে কেন্দ্র করে EH এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকি। তাহলে, এই বৃত্তটিই নির্ণেয় বহির্বৃত্ত।
প্রমাণ : E থেকে BD ও CF রেখাংশের ওপর যথাক্রমে EG ও EL লম্ব টানি। মনে করি, লম্বদ্বয় BD ও CF রেখাংশদ্বয়কে যথাক্রমে G ও L বিন্দুতে ছেদ করে।
E বিন্দুটি ∠DBC এর দ্বিখণ্ডকের ওপর অবস্থিত EH = EG
অনুরূপভাবে, E বিন্দুটি ∆FCB এর দ্বিখণ্ডকের ওপর অবস্থিত বলে EH = EL
EH = EG = EL
সুতরাং E কে কেন্দ্র করে EL এর সমান ব্যাসার্ধ নিয়ে অঙ্কিত বৃত্ত H, G এবং L বিন্দু নিয়ে যাবে।
আবার, EH, EG ও EL এর প্রান্তবিন্দুতে যথাক্রমে BC, BD ও CF রেখাংশ তিনটি লম্ব।
সুতরাং বৃত্তটি রেখাংশ তিনটিকে যথাক্রমে H, G ও L বিন্দু তিনটিতে স্পর্শ করে।
অতএব, HGL বৃত্তটিই ∆ABC এর বহিবৃত্ত হবে।
মন্তব্য : কোনো ত্রিভুজের তিনটি বহির্বৃত্ত আঁকা যায়৷
কাজ : ত্রিভুজের অপর দুইটি বহির্বৃত্ত আঁক। |
আরও দেখুন...